

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে ৪৯০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আজ (৩ ডিসেম্বর) বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ নিয়ে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯১ জনে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ৯৬ হাজার ৬৭ জনে।চলতি বছর নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। ওই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়।
মন্তব্য করুন


ভোলায় গত পাঁচ দিনে ১২টি রাসেলস ভাইপার
সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। ১২টি সাপের মধ্যে এলাকাবাসী
১১টি সাপ মেরে ফেলেছে। আর একটি সাপ বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে এলাকাবাসী।
জেলার সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন,
তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও খেলার
মাঠে একের পর এক রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলছে। একের পর এক এই সাপ উদ্ধারে জনসাধারণের
মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালে সদর উপজেলার শিবপুরের 'গরিবের ডুবাই নামে খ্যাত'
চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে একটি, তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বসত বাড়ির
সামনে ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার
পাওয়া যায়।
এছাড়াও গত বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে জেলার
তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠ, গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সদর উপজেলার
পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথা এলাকায় বসত বাড়ির পাশের জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায়
একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের
জালু মাঝির বসতঘর, রোববার (১৬ জুন) লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ
এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগার, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের
বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে
পিটিয়ে মেরে ফেলে।
এর মধ্যে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া
একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে সর্বসাধারণের মাঝে
রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে ।
স্থানীয়রা জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে
জেলার সর্বত্র সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর আগে সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের
কুকরি-মুকড়ি, ঢালচর কিংবা মনপুরা উপজেলায় দেখা মিললেও এবার সদর উপজেলাসহ প্রায় সবস্থানেই
সাপের বিচরণ বেড়েছে। একের পর এক বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলছে বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় জেলে জয়নাল মাঝি বলেন, নদীতে
মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। পরে আরও লোকজন
এসে সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে নাম দেয়। এই সাপ এর আগে আর কখনো দেখিনি। সাপটি দেখতেও
অনেক ভয়ানক। অন্য সাপের থেকে দেখতে আলাদা। সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেলে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল
হক বলেন, রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো
ওই সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন


রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশের আট বিভাগেই আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কমতে পারে দিন-রাতের তাপমাত্রা।
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপটি অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলিতে। এদিন মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ঝরেছে রাজধানী ঢাকায়ও।
আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি নামতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকবে শক্তিশালী এ বৃষ্টিবলয়। এটি সারা দেশে একসঙ্গে সক্রিয় না হয়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটাবে। বৃষ্টিবলয়টির সর্বোচ্চ সক্রিয়তা থাকবে ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এটি অতিক্রম করার পর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হকের দেওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়, আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
একই ধারা বজায় থাকবে। সারাদেশেই দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে।
(১৫-১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় একই ধারা বজায় থাকবে। সারাদেশেই দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে। তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামেও বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে। তবে তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, পরবর্তী পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।
মন্তব্য করুন


রোববার ও সোমবার একটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৩।
রোববার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির অভিপ্রায়
অনুযায়ী আপিল বিভাগে রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমানকে কুমিল্লায় বদলি করা
হয়েছে। আর আপিল বিভাগের নতুন রেজিস্ট্রার হয়েছেন রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন
দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান।
জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে বদলি করে
পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদে প্রেষণে নিয়োগে তাদের
চাকরি প্রধান বিচারপতির অধীনে ন্যস্ত করা হলো।
এদিকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক
(জেলা জজ) মুহা. হাসানুজ্জামানকে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার পদে, নওগাঁর অতিরিক্ত
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমতিয়াজুল ইসলাম ও বাগেরহাটের অতিরিক্ত চিফ
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুস সামাদকে হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে
বদলি করা হয়েছে।
সোমবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে
পরামর্শক্রমে জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে বদলি করে
পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদে ও কর্মস্থলে নিয়োগ বা বদলি
করা হলো।
আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমানকে কুমিল্লার
জননিরাপত্তা অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) পদে, কুমিল্লার
জননিরাপত্তা অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) বেগম মরিয়ম মুন মুঞ্জুরীকে
রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) পদে,
হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো.মিজানুর রহমানকে রাজশাহীর যুগ্ম জেলা জজ
পদে, রাজশাহীর যুগ্ম জেলা জজ মো. আফাজ উদ্দিনকে রংপুরের যুগ্ম জেলা জজ পদে
এবং হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো.শামীম সুফীকে আইন মন্ত্রণালয়ের
সংযুক্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন


বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় দেশবাসীকে সালাম জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।
ড.
মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেছেন, আজ আমরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম মাস
উদযাপন করছি। ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় বিপ্লবের জন্য শত শত ছাত্র এবং সর্বস্তরের মানুষ
সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাদের বাংলাদেশকে এর পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার
দায়িত্ব আমাদের।
তিনি বলেন, আমি সেই সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, পেশাজীবীদের স্মরণ করছি যারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। স্মরণ করছি আন্দোলন চলাকালে নিহত সাংবাদিকদের। আজ আমি এই বিপ্লবে শাহাদাত বরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি অভিবাদন জানাই হাজার হাজার মানুষকেও যারা আহত হয়েছেন, প্রাণঘাতী আঘাতের শিকার হয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, কিংবা চক্ষু হারিয়েছেন।
গত মাসে আমাকে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং সমস্ত জানা এবং অজানা শহীদদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার প্রিয় তরুণেরা, তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনো নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’
তিনি আরো বলেন, বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছো এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চির বিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছো। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছো এবং সারাদেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছো। আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদেরকে ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।
তিনি বলেন, মাত্র একমাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এদেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান দায়িত্বগুলির মধ্যে একটি হল বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে। আমরা শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূর-দূরান্তে যাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলিতে পূর্ণাঙ্গতা দেওয়া হচ্ছে। আহত শত শত মানুষ যাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন এখন তৈরির শেষ পর্যায়ে আছে। যাদের শাহাদাতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে আমরা তাদের কখনোই ভুলবো না।
ড.
মুহাম্মদ ইউনূস সবশেষে বলেন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা নিলাম শহিদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের
আত্মত্যাগকে জাতি হিসাবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য
তৈরি করে দিয়েছেন সে সুযোগকে আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেবো না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে
আবারও প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বোই। মহান আল্লাহ আমাদের
সকলের সহায় হোন।
মন্তব্য করুন


আসন্ন
চীন সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক
ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের
মধ্যে এটি একটি।
আজ
রোববার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রধান
উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস
সচিব আরও বলেন, আগামী ২৯ মার্চ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য
রাখবেন ড. ইউনূস। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি
দেওয়া হবে। চীনের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। চীনের
সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সম্পর্ক উন্নয়নেও কাজ করা হচ্ছে। চীন এরইমধ্যে জানিয়েছে,
তারা বাংলাদেশে একটি জেনারেল হাসপাতাল স্থাপন করবে। প্রধান উপদেষ্টা চাইছেন, চীনের
চেইন হাসপাতালগুলো বাংলাদেশে এসে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করুক এবং জয়েন্ট ভেঞ্চারে
হাসপাতাল পরিচালনা করুক।
মন্তব্য করুন


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ১৮ কোটি মানুষের বিজয় নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ ঐক্য আমাদের জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আরও একবার ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে।
আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্দোলনরত ৮ দলের উদ্যোগে খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়ে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, আমার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাঁবেদারি নয়- স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অরাজকতা অব্যাহত আছে। আগামী নির্বাচনে ছলে-বলে কৌশলে ক্ষমতায় যেতে কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের জাল বিচ্ছাচ্ছে।
তরুণদের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন এবং আগামীতে ইসলামী দলগুলোর হাতে দেশ তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।
যারা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি তাদের উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমির বলেন, এবার তোমাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে চাইলে আমরা তা হতে দেব না। সেদিন আমারও যুবক হয়ে তোমাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করব। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমাদের হাতে আমার দেশটা তুলে দিতে চাই। সেজন্য নিজেদের প্রস্তুত করো। তোমরা চাকরি করবে না, চাকরি দেবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে জনগণের লালিত স্বপ্ন অনেকাংশেই বাস্তবায়ন হয়নি। দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হলেও এটা প্রকৃত উন্নয়ন নয়। দেশ ও জাতির মধ্যে ন্যায়বিচার ও সামাজিক সুশাসন আছে কিনা সেটা বিবেচ্য।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধারায় চলমান উল্লেখ করে আমির বলেন, এক ধারায় রয়েছে মাদ্রাসাশিক্ষা। অন্য ধারায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা। মাদ্রাসায় খুনোখুনি হয় না। অস্ত্রবাজি হয় না। জ্ঞানের চর্চা হয়। পক্ষান্তরে ৫৪ বছরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের লাশ পড়েছে। মদ-গাঁজার আসর বসেছে। মেয়েদের ইজ্জত লুট হয়েছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়েছে। সভ্য হতে হলে আমাদের দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। কিছু দল ও ব্যক্তি দফায় দফায় দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে।
ডা. শফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, অনেক স্থানে আমাদের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে জনগণ এখন আর পোস্টার দেখে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা আমাদের ভালোবেসে বুকের মধ্যে স্থান দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীরসাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, অনেকে বলেন আমার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই। কিন্তু আমার নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু তারাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে হিসাব নিকাশ করে দেখেছেন তাদের পায়ের তলে মাটি সরে গেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে আপনারাই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। গুন্ডামি করে, সেন্টার দখল করে, সন্ত্রাসী চালিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন। সেদিন ভুলে যান। সে সুযোগ আর আপনারা পাবেন না।
সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। ৭২ বাকশালপন্থি আর এক ভাগ ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থি শক্তি।
তিনি আরও বলেন, রক্তের সাগর পেরিয়ে ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর যেই ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আসবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কার্যকরে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে এ মাহাত্ম্যকে নষ্ট করবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হোক।
মামুনুল হক বলেন, ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকার ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। কলঙ্ক নিয়ে আপনাদেরও বিদায় নিতে হবে। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।
তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থেকে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। তারা চেয়েছিল ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। ৮ দল ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ থাকবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ নেজামী ইসলামী পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার বলেন, খান জাহান আলীর শহর খুলনা, রূপালী শহর খুলনা। যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে থাকবে, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। যারা এদেশে শরীয় আইন চায়না তাদের লাল কার্ড দেখাবে। সিসা ঢালা এই ঐক্য ধরে রেখে আমরা ইসলামী সংসদ গড়ে তুলব।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, এ দেশের সংবিধান হবে আল্লাহর কোরআন। সংসদে হবে কোরআনের আইন। যে কোনো ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবিলা করব। মানুষকে বোঝাতে হবে আল্লাহর আইন ছাড়া শান্তি সম্ভব না।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেছেন, যারা বলেছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবকে খুলনায় আসতে দেবে না। তারা এসে দেখে যান বাবরী চত্বর ইসলামি দলে ভরে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫ আগস্টে জনগণ দেখেছে এ দেশের জনগণ হিন্দুত্ববাদ কায়েম করতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ চাঁদাবাজি দেখতে চায় না।
গণভোটের প্রশ্নে তিনি বলেন, গণভোটকে হ্যাঁ বলুন, ৮ দলের প্রতীকে সিল মারুন।
বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি বিডিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, আমরা দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছি। এদেশের মানুষ অন্য দেশের দালালি করতে চায় না। মানুষ দালালি নয়, মুক্তি চায়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীরসাহেব চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি বিডিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন ও খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন।
মন্তব্য করুন


কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য দ্রুত মিশরের সঙ্গে
পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর
আলম চৌধুরী।
আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিশরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এলদিন আহমেদ ফাহমি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কূটনৈতিক
ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদনের জন্য
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিশরে পাঠানো হয়েছে। মিশরের পক্ষ
থেকে এটি অনুমোদিত হলে চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হবে। তাছাড়া সাধারণ পাসপোর্টধারীদের
জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে মিশরের
পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা
ইস্যু, পুলিশের প্রশিক্ষণ, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাস
দমন, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞতা
বিনিময়সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে
স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিশর বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশ।
দেশটি প্রাচীন সভ্যতা ও ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আন্তঃদেশীয় অপরাধ নেটওয়ার্ক দমনের
বিষয়টি পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হতে হবে। নিরাপত্তা ক্ষেত্রে
সহযোগিতা ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ এবং পারস্পরিক আইনি
সহায়তা বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমানে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা
হুমকি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বড় ধরনের
কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে
একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ। কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তে নিরাপত্তা সমস্যা
সৃষ্টি করছে।
উপদেষ্টা এ সময় মিশরকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তা ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নৈতিক সহায়তার আহ্বান জানান।
সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বিষয়ে মিশর বাংলাদেশকে সহযোগিতা
করতে পারে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিশরের সঙ্গে
ইসরায়েলের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম বিরোধপূর্ণ সীমান্ত। তথাপি মিশরের
সীমান্তরক্ষী বাহিনী এটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কর্মশালা
ও প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এটি করা গেলে বিজিবি মিয়ানমার সীমান্তে আরও দক্ষতা ও নিপুণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে
সক্ষম হবে মর্মে আমি মনে করি।
এ সময় উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ৫০ বছর
ধরে বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক পারস্পরিক
শ্রদ্ধা ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে সেরা পুলিশ প্রশিক্ষণ
একাডেমি মিশরে অবস্থিত। মিশর বাংলাদেশকে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা
করতে পারে। তাছাড়া মিশর বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল
গনি, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক-১) মু. জসীম উদ্দিন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক বি এম জামাল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন


বুধবার (২০ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করা হয়েছে। সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য প্রত্যয় স্কিমের রূপ রেখা ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই ও তারপরে নতুন যোগদান করবেন তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভূক্ত করেছে সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৩ মার্চ জারি করা এসআরও (নং-৪৭-আইন/২০২৪) এর মাধ্যমে সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভূক্ত করেছে সরকার।
এছাড়া ১৩ মার্চ জারি করা এসআরও (নং-৪৮-আইন/২০২৪) এর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য প্রত্যয় স্কিমের রূপ রেখা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন/আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।
তবে, যাদের ন্যূনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবসর জীবনে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় চলতি বছরের ১ জুলাই ও তার পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান দেওয়া কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কম সংখ্যক স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পেনশন স্কিম চালু রয়েছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ ব্যবস্থা প্রযোজ্য। উক্ত ব্যবস্থায় কর্মচারীরা চাকরি শেষে অবসর সুবিধা হিসাবে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন, কিন্তু মাসিক কোনো পেনশন প্রাপ্য হন না।
ফলে অবসরোত্তর জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন। কর্মচারীদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা, যাহা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কর্তন করা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে।
এরপর উভয় অর্থ ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ওই কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং ওই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমা করা অর্থের ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮.৩৩ শতাংশ প্রদান করে থাকে। প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১.৬৭ শতাংশ বেশি। প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক দুই হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা প্রদান করলে তিনি অবসর গমনের পর অর্থ্যাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন।
তবে এ ক্ষেত্রে ৩০ বছর ধরে মাসিক দুই হাজার ৫০০ টাকা হারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ নয় লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ নয় লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী মিলিয়ে সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা। তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তবে ১৫ বছরে পেনশন প্রাপ্য হবেন এক কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা। যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২.৪৭ গুণ।
মন্তব্য করুন


জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুরুতর আহতদের
খোঁজ নিতে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে আগারগাঁওয়ের
হাসপাতালটিতে পরিদর্শনে যান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
জুলাই-আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে গুরুতর
আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ৮ শিক্ষার্থীসহ
গুরুতর আহত কমপক্ষে ১১ জন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ সময় হাসপাতালের পরিচালক কাজী দীন
মোহাম্মদ বলেন, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ৪ শিক্ষার্থীর
অবস্থা প্রধান উপদেষ্টা দেখেছেন। চারজনেরই মাথায় গুলি লেগেছে। তাদের অবস্থার উন্নতি
হচ্ছে।
মন্তব্য করুন


সারাদেশে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ।
কয়েকটি চক্র রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু কর্মচারী, সহজ ডটকমের অসাধু কর্মকর্তা, সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতো । এছাড়া সংরক্ষণ করা জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতো এসব চক্র।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব -৩।
গ্রেফতাররা হলেন- ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা মো. সেলিম (৫০), তার প্রধান সহযোগী মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), মো. হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), মো. শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩) ও মো. আব্দুর রহিম (৩২)।তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), তার প্রধান সহযোগী মো. মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও মো. জোবায়েরকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।তিনি বলেন, অনলাইনে বা রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে বেশি দামে টিকিট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকিট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুত করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের কাছ দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয় এবং এই রুটে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ এই ভ্রমণে নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য এ রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। টিকেটের চাহিদা বেশি থাকায় টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে যায়; অনলাইনে বা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় এই রুটের ট্রেনের টিকিট। কিন্তু কালোবাজারিদের কাছে ২-৩ গুণ দামে টিকিট বিক্রি হতে দেখা যায়।চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ার এবং টিকিট কালোবাজারিরা বেশি দামে টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কিছু তথ্য প্রদান করেছে ।
স্টেশনে কুলি, টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ:
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তমের নেতৃত্বে এ চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। গ্রেফতার সেলিম এবং উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করত।
যাত্রীদের এনআইডি সংগ্রহ করে পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে কাটা হতো টিকিট:
এক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। এছাড়াও কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীদের টিকিট কাটার সময় এনআইডি সংগ্রহ করে রাখে এবং পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে থাকে।
প্রতিদিন ৫০০ টিকিট সংগ্রহ করতো তারা:
এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতো। অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাড়িয়ে এবং কৌশলে লাইনে অপেক্ষমান টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে চারটি টিকিট কিনে তিনটি টিকিট নিজেরা তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকিটগুলো কিনে নিতো।
সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ:
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ঈদ, পুজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতাররা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতো।
শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কাটানো হতো:
কমান্ডার মঈন বলেন, পাশাপাশি গ্রেফতাররা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। গ্রেফতাররা স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করতো। এসব টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সঙ্গে তারা ভাগ করে নিতো। ফলে রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে গ্রেফতাররা অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতো।
গ্রেফতারকৃত সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা উপযুক্ত সময় বুঝে সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে। রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছে গ্রেফতাররা টিকিট বিক্রির জন্য ঘুরাঘুরি করে এবং বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। এছাড়াও ট্রেন ছাড়ার সময় যত সন্নিকটে আসতে থাকে তাদের মজুত করা কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে এবং সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়।
ঈদের সময় ৪ গুণ দামে টিকিট বিক্রি:
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেফতাররা প্রতিটি টিকেট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করে। প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণে বিক্রি করে এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ পায় গ্রেফতাররা নিতো এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।
৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারি করেছে সেলিম:
কমান্ডার মঈন জানান, গ্রেফতার সেলিম দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে সাতটি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন তিনি। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় আবার টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রমে লিপ্ত হয়।
১৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত কাশেম:
তিনি বলেন, গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি গ্রেফতার সেলিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। মূলত তার দায়িত্ব ছিল কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা। এর আগে তিনি মাদক মামলাসহ একাধিক মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।
এছাড়াও গ্রেফতার অবনী সরকার ও হারুন মিয়ার দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম এলাকার কাস্টমার সংগ্রহ করা। একইভাবে মান্নান এবং আনোয়ার ওরুফে ডাবলুর দায়িত্ব ছিল সিলেট এলাকার কাস্টমার সংগ্রহ করা। ফারুক এবং শহীদুল ইসলাম বাবুর দায়িত্ব ছিল ভৈরব ও কিশোরগঞ্জের কাস্টমার দেখাশোনা করা। জুয়েল এবং আব্দুর রহিমের দায়িত্ব ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়ার যাত্রী সংগ্রহ করা। এছাড়াও গ্রেফতারদের সবার বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির মামলা রয়েছে।
১৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারি করেছে উত্তম:
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার উত্তম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি বিমানবন্দর রেলস্টেশনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার সহযোগী গ্রেফতার আলী ও ফারুকসহ রাজধানীর আশকোনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করত। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং এই সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রেলস্টেশন এলাকায় সবসময় অবস্থান করে টিকিট কালোবাজারি চক্র গড়ে তোলে।
উত্তমের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির দায়ে চারটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হন।
মন্তব্য করুন